মোবাইলের ক্ষতিকর দিক জেনে নিই
মোবাইল একটি ইংরেজি শব্দ। মোবাইলের বাংলা প্রতিশব্দ হল চলমান বা সচল গতিময়। তথ্য প্রযুক্তির যুগে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য মোবাইল ফোন অতীব প্রয়োজনীয় একটি ডিভাইজ। আধুনিক জীবন ব্যবস্থার সাথে মোবাইল ফোন জড়িত। মোবাইল ছাড়া আমরা একটি দিনও কল্পনা করতে পারিনা । বর্তমান প্রজন্মে এক মুহূর্তের জন্য মোবাইল ছাড়া চলা দায়। ভালো দিকের পাশাপাশি মোবাইলের ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির অন্যতম আবিষ্কার হচ্ছে মোবাইল ফোন। অল্প সময়ে দ্রুত যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল ফোন একটি বড় হাতিয়ার। আমরা বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো জাইগায় থাকা আমাদের বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়, প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ করতে পারি।
ভূমিকা
আধুনিক যুগে আমাদের সকল কাজের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হয়ে উঠছে মোবাইল ফোন। সামাজিক সভ্যতাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।তবে প্রযুক্তির ২টি দিক রয়েছে ভাল-মন্দ। এই দুই দিকের দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার করবো। মোবাইল এর দুটি দিক রয়েছে ভাল-মন্দ।সুতরাং দিক বিবেচনা করে আমাদের মোবাইলের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে নাহলে মোবাইলের খারাপ দিক আমাদের জীবনে গ্রাস করে নিতে পারে।
মোবাইল ফোন ও আধুনিক প্রযুক্তি
আধুনিক প্রযুক্তির সবচাইতে বড় হাতিয়ার হল মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার। কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের ফিউচার কম বেশি একই। তবে কিছু কিছু কাজ আছে যেগুলো কম্পিউটার ছাড়া করা যায়না। সেক্ষেত্রে কম্পিউটার বেস্ট। কিন্তু সমস্যা হল কম্পিউটার বহনের অসুবিধা। আর যদি ডেস্কটপ হয় তাহলে তো আগেই বাদ। ল্যাপটপ বহনের অসুবিধার কারণে অনেকই এটিকে দ্বিতীয় চয়েসে রাখে আর তাদের প্রথম চয়েস হল স্মার্ট ফোন।
ফোন আমরা আমাদের হাতে, পকেটে নিয়ে যেকোনো যায়গায় যেতে পারি। একটা মোবাইল ফোনের ওজন বড়জোর ২০০/২৫০ গ্রাম। বহনের সুবিধার জন্য এটাই বেস্ট। কম্পিউটার যে কাজগুলো করতে পারে বর্তমান জেনারেশনের মোবাইলে সেই ফিচারগুলো উন্নত করা হচ্ছে।তাই কম্পিউটার এর চাইতে মোবাইল ব্যবহারকারির সংখ্যা অনেক বেশি।
২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের মোবাইলের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি ৭০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোন জিনিসের ওপর বেশি নির্ভরশীল থাকি তাহলে সেটি মোবাইল ফোন। সকালে ঘুম থেকে উঠার সময় থেকে শুরু করে সব কাজে মোবাইল ব্যবহার করে থাকি।
মোবাইলের ব্যবহার
মোবাইলের ব্যবহার বলে শেষ করা যাবে না। মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে।হাত পা মুখ যেমন শরীরের অংশ তেমনি মোবাইল ফোনও আমাদের জীবনের একটি অংশ। ভালো দিকের পাশাপাশি মোবাইলের ক্ষতিকর দিক আছে। এগুলো বিবেচনা করে আমাদের মোবাইলের ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু ব্যবহার তুলে ধরা হলঃ
ইন্টারনেট ব্যবহারঃ আমরা বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট থেকে সবচাইতে বেশি তথ্য গ্রহণ করে থাকি। আমাদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য গুগল আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। আমরা জিজ্ঞাসা করার সাথে সাথে আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো গুগল আমাদের সামনে হাজির করছে। এটা করতে গুগলের মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে। আবার আমরা যে বিষয়ে জানতে চাই সেই সম্পর্কযুক্ত যত তথ্য আছে সব গুলো গুগল আমাদের সামনে তুলে ধরে।
ই-মেইল,এসএমএস,প্রেরণ ও গ্রহনঃ ই-মেইল হল ইলেক্ট্রনিক মেইল এর সংক্ষিপ্ত কথা। ক্ষুদেবার্তা গ্রহণ ও প্রেরণ করা হয় এটার মাধ্যমে। আর এসএমএস এর পূর্ণরূপ হচ্ছে শর্ট ম্যাসেজ সার্ভিস। বন্ধু বান্ধবদের আমরা দিয়ে থাকি। ই-মেইল সাধারণত অফিস আদালতে বেশি ব্যবহার হয়।
ছবি ও ভিডিও করাঃ ফেসবুকে ছবি আপলোড দেওয়া থেকে শুরু করে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ছবি আমরা মোবাইল দিয়ে তুলি। কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সৃতি মনে রাখার জন্য ভিডিও করে রাখি।
ক্যালকুলেটরঃ হিসাব নিকাশ করার জন্য এখন আর ক্যালকুলেটর লাগে না। সব ধরণের মোবাইলে এখন হিসাব নিকাশ করা যায়।
ঘড়ি দেখার সময়ঃ মোবাইল দিয়ে আমরা সঠিক সময় দেখতে পারি।
ট্রেনের টিকেট বুকিং করাঃ একটা সময় ছিল যখন আমাদের টিকেট কাটার জন্য আর স্টেশনে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর দরকার হয়না । ঘরে বসে আমরা মোবাইল ফোন দিয়ে ইচ্ছামত টিকেট বুক করতে পারি।
টাকা আদান প্রদান করাঃ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আমরা দেশ বিদেশে টাকা দেওয়া নেওয়া করতে পারি নিরাপদে।
ভিডিও কনফারেন্স কথা বলাঃ দূর দুরান্ত থেকে আমরা আমাদের প্রিয়জনকে সরাসরি দেখতে পারি। ব্যবসায়ী চুক্তি করতে পারি । ছাত্রছাত্রীরা ঘরে বসে সরাসরি ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে।
গ্যাস,বিদ্যুত বিল দেওয়াঃ ঘরে বসে যেকোনো বিল দিতে পারি।
মোবাইল দিয়ে ইনকামঃ ফ্রীলান্সিং এর অনেক কাজ মোবাইল দিয়ে করা যায়।
অনলাইনে শপিংঃ দারাজ, আলিবাবা ডট কম ইত্যাদি নামে অনেক গুলো সাইটে আমরা আমাদের পছন্দের পোশাক অর্ডার করতে পারি।
গেম খেলাঃ বিনোদনের অন্যতম একটি হল মোবাইল গেম।বর্তমানে অনেক গুলো অনলাইন ও অফলাইন গেম আছে যেগুলো আমরা মোবাইল দিয়ে খেলতে পারি।
চিকিৎসা সেবাঃ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গুলোর সাথে আমরা ভিডিও কলে আমাদের সমস্যার কথা গুলা বলে চিকিৎসা সেবা নিতে পারি।
আসলে মোবাইলের ব্যবহারের কোন শেষ নাই। আমরা জীবনে চলার পথে সব ক্ষেত্রেই মোবাইল ব্যবহার করে থাকি।
মোবাইল ফোন ছাত্রছাত্রীর জন্য অভিশাপ
এতোক্ষণ আমরা মোবাইল ফোনের উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু অধিক মোবাইল ফোনের ব্যবহার আমাদের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। ভালো দিকের পাশাপাশি মোবাইলের ক্ষতিকর দিক আছে যা বর্তমানে এটা একটি অভিশাপ। কেননা তারা ভালো কাজের পাশাপাশি মোবাইলের ক্ষতিকর দিকটা বেশি ব্যবহার করে। দিনের পর দিন রাতের পর রাত মোবাইল ফোনের প্রতি তাদের আসক্তি বাড়ে।
যে বয়সে তাদের হাতে বই খাতা থাকবে সেই বয়সে হাতে স্মার্টফোন। মোবাইল গেমে আসক্ত হয় যাচ্ছে তারা। ইন্টারনেট, ফেসবুক ব্যাবহারের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে তাই বলা যায় মোবাইল ফোন ছাত্রছাত্রীদের জন্য এখন অভিশাপ।
মোবাইলের উপকারিতা
আসলে মোবাইলের উপকারিতা অনেক। মোবাইলের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। কারণ আমরা দৈনন্দিন জীবনের চলার সময় মোবাইলের ব্যবহার করে থাকি। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে আমরা রাতে শুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মোবাইলের ব্যবহার করে থাকি। মোবাইলের ভালো দিকের পাশাপাশি মোবাইলের খারাপ দিক রয়েছে।
মোবাইলের ক্ষতিকর দিক
প্রতিটা জিনিসের দুইটা গুণ থাকে ভালো-খারাপ।ঠিক তেমনি মোবাইল ফোনের ভালো দিকের পাশাপাশি খারাপ দিক রয়েছে। নিচে মোবাইলের ক্ষতিকর দিক বর্ণনা করা হলঃ
চোখ জ্বালা করাঃ দীর্ঘক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে আমাদের চোখে জ্বালাপড়া করতে পারে। মোবাইলের আলো থেকে গামা রশ্মি নির্গত হয় । তাই অনেকক্ষণ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের চোখে সমস্যা হয়। এটি মোবাইলের ক্ষতিকর দিক।
কানে সমস্যাঃ কানে সমস্যা আর একটি প্রধান সমস্যা। বিনোদনের জন্য আমরা উচ্চস্বরে গান, ছবি, নাটক , গজল শুনি হেডফোন লাগিয়ে যার জন্য আমাদের কানে সমস্যা হতে পারে।
ঘাড় ব্যাথা করাঃ মোবাইলের স্কিনের দিকে আমরা এক দৃষ্টিতে তাকাই থাকি যার জন্য আমাদের ঘাড় ধরে যাই আবার শুয়ে একদিক হয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য ঘাড়ে সমস্যা হতে পারে।
মাথা ব্যাথা করাঃ অনেকক্ষণ একভাবে স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে মাথাই ব্যাথা হয়। এটি মোবাইলের ক্ষতিকর দিক।
অতিরিক্ত ক্লান্তিঃ বেশি বেশি ফোন চালানর জন্য আমাদের শরীরে ক্লান্তি চলে আশে।/মেজাজ চড়া হয়ে যায়। বাড়ির কোন কাজে মন বসে না। পড়াশুনাই মন বসে না।
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেঃ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা মোবাইলের ক্ষতিকর দিক দিন রাত ফোন চালানোর ফলে ঠিকঠাক ঘুম হয়না যার জন্য ঘুমের যে রুটিন সেটাই ব্যাঘাত ঘটে।
চিন্তা শক্তি কমে যায়ঃ অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। বেশি বেশি ফোন ব্যাবহারের জন্য আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পায়।
মেজাজ খিটখিটে হয়ঃ মাত্রারিক্ত মোবাইল চালানোর ফলে মাথা সব সময় গরম থাকে। কেউ ভালো কথা বললেও সেটা শুনলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এটি অন্যতম মোবাইলের ক্ষতিকর ক্ষতিকর দিক।
উপরিক্ত সমস্যা ছাড়াও আরও মোবাইলের ক্ষতিকর দিক আছে। প্রধান প্রধান সমস্যাগুলো উপরে তুলে ধরা হয়েছে।
মোবাইল রেডিয়েশনে সম্ভাব্য রোগ
- ব্রেইন টিউমার
- ক্যানসার
- পারকিনসন্
- আলঝেইমার্স
- মাথা ব্যাথা
- ক্লান্তি
লেখকের মন্তব্য
আসলে কোন কিছুই মাত্রারিক্ত ভালো নয়। সবকিছু লিমিটের মধ্যেই থাকা ভালো। মোবাইল ফোনের ভালো দিকের পাশাপাশি মোবাইলের ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আমাদের এগুলো বিবেচনা করে মোবাইল ব্যবহার করা উচিত। আমাদের ছেলেমেয়েদের এই বিষয়ে সচেতন করা উচিত।
অতঃপর পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের পেজে সাপোর্ট করবেন। কোন বিষয়ে জানার থাকলে কমেন্ট করবেন আর বন্ধুদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাদের এই বিষয়ে জানার সুযোগ করে দিন ধন্যবাদ।
রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url