মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায় জানুন



দুশ্চিন্তা করে না কিংবা চিন্তা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বেঁচে থাকলে দুশ্চিন্তা থাকবেই। বলা যায় মাথা থাকলে টেনশন থাকবেই। জীবনে অনেক সমস্যা আসবে আর যাবে। আমাদের সমস্যার মধ্যে বেঁচে থাকতে হবে ভেঙ্গে পড়লে হবে না। বেশি দুশ্চিন্তা করতে করতে আমরা মানসিক রোগী হয়ে যেতে পারি। তাই আমাদের মানসিক রোগের কারণ এবং লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে। আজকের পোস্টে আমরা মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায় সম্পর্কে জানবো।

মানসিক রোগ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের সব সময় হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে। জীবনের ছোট ছোট সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। মানসিক রোগ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। আমাদের একটি পোস্টে মানসিক রোগীর লক্ষণ সম্পর্কে বলে আছে ঐ পোস্টটি পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

ভূমিকা

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমরা নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হই। যারা সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলতে পারেনা তারা নানা রকম দুশ্চিন্তায় ভুগে এবং মানসিক রোগী হয়ে যায়। আমাদের সকলের উচিত ছোট ছোট সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলা। আজকে আমাদের পোস্টের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায়। আপনি যদি এই সমস্যা থাকে বাঁচতে চান তাহলে পোস্টটি আপনার জন্য।

মানসিক রোগী চিনার উপায়

আপনি কীভাবে বুজবেন যে আপনিও একজন মানসিক রোগী? মানসিক রোগীর কিছু কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো দেখলে ভাববেন আপনিও মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছেন।

  • খাবারে অরুচি।
  • দিনের বেলায় শরীর ক্লান্ত হয়।
  • অনিয়মিত ঘুম।
  • অনেক সময়ই মন খারাপ থাকে।
  • ছোট বিষয়ে রেগে যাওয়া।
  • কাজে অনাগ্রহ।
  • নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা করা।
  • বিষণ্ণতা/ দুশ্চিন্তা বেশি করা।
  • অমনোযোগী ও সিধান্তহীনতাই ভোগা।
  • হুট করেই বুক ধড়ফড় করা।
  • প্রিয় মানুষের প্রতি অনীহা।
  • বিরক্ত ও খিটখিটে মেজাজ
  • হতাশ ও অপরাধবোধ।
  • আত্মহত্যা চিন্তে করা।
  • আত্মবিশ্বাস কমে যায়।
  • নিজের যত্ন না নিয়া।
  • বন্ধুবান্ধবদের এড়িয়ে চলা।
  • পরিবারে কথা চিন্তা না করা।
এই লক্ষণগুলো আপনার মধ্যে পরিলক্ষিত হলে সাথে সাথে কিছু অভ্যাস ত্যাগ করুন। একজন ভালো ডাক্তারের শরণাপন্ন হন এবং মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায় সম্পর্কে জানতে হবে।

মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায়

প্রতিটি সমস্যার একাধিক সমাধান থাকে। মানসিক চাপ থেকে মুক্তির অনেক সমাধান আছে। এখন আমরা জানবো মানসিক চাপ থেকে মুক্তির ২০ টি উপায়।

গভীর শ্বাস নিন
আপনি যদি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হোন তাহলে আপনার উচিত নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্বাচন করা অথবা কোলাহলশূন্য একটি স্থানে যাওয়া। সেখানে বসে গভীর শ্বাস নিন। এতে আপনার মানসিক চিন্তার অবসান হবে। গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ফলে আপানার হৃদপিণ্ড দ্রুত কাজ করবে এবং মনোযোগ অন্যদিক চলে যাবে।

মেডিটেশন করুন
মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য চাইলে মেডিটেশন করতে পারেন। মেডিটেশন হচ্ছে ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক চাপ, যন্ত্রণা ও কষ্ট কমানোর একটি মাধ্যম। মেডিটেশনের ফলে আপনার মনে শান্তি প্রশান্তি, আত্মবিশ্বাস, উপলব্ধি ইত্যাদি বাড়ে। মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায় এর মধ্যে মেডিটেশন অন্যতম।

চকলেট অথবা সুইংগাম খান
গবেষণায় দেখা গেছে আপনি কোন বিষয়ে যখন অধিক চিন্তিত থাকেন তখন চকলেট খেলে মনোযোগ ব্রেক করে এবং ঐ বিষয়ে হতাশা ভয় কমে যায়। ক্রিকেটাররা যখন মাঠে ক্রিকেট খেলে তখন তাদের মুখে কিছু একটা চিবাতে দেখতে পাবেন। বিশেষ করে ব্যাটিং যখন ব্যাট করতে নামে তখন তাকে সুইংগাম চিবাতে বেশি দেখা যায়। 

হাইপারটেনশন কিংবা দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য তারা এই কাজটি করে। সুইংগাম চিবানোর ফলে আপনার মনোযোগ অন্যদিক যেতে পারে ফলে দুশ্চিন্তা কমে যাবে। তাই মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য চকলেট অথবা সুইংগাম খান।

শারীরিক পরিশ্রম করুন
অলস মস্তিষ্কও শয়তানের কারখানা। তাই মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য নিজেকে কর্মব্যাস্ত রাখুন। সারাদিন ব্যাস্ততার মধ্যে থাকলে আপনি যে বিষয়ে হতাশা বা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন সে বিষয়টা আপনার মাথায় আসবে না। তাই মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে শারীরিক পরিশ্রম করা।

ঠাণ্ডা পানি পান করুন
পানির ওপর নাম জীবন। জীবন বাঁচতে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন। পানি আমাদের মস্তিষ্ককে ঠাণ্ডা রাখে। বেশি বেশি চিন্তা করলে আমাদের মাথা গরম হয়ে যায়।আপনি যখন মানসিক চিন্তায় বিভোর তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঠাণ্ডা পানি পান করুন। পানি আপনার ব্রেইনকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করবে।

প্রান খুলে হাসুন
হাসি আপনার মন এবং স্বাস্থ্য উভয়ই ভালো রাখতে সাহায্য করুন। যখন মানসিক চিন্তায় ভুগবেন তখন সম্ভব হলে কারো সাথে কথা বলুন এবং হাসুন। প্রয়োজনে যেকোনো জোকস পড়ুন অথবা ফানি ভিডিও দেখুন। যেকোনো মূল্যে আপনাকে হাসতে হবে। হাসি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণে হাসতে হবে।

সংখ্যা গণনা করুন
গবেষণায় দেখা গেছে যে কোন মানুষ যখন অনেক মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগে তখন উল্টা দিক থেকে গণনা শুরু করুন। যেমন ১০০,৯৯,৯৮,৯৭ ইত্যাদি।

অনেক ঘুমানো
ঘুম হচ্ছে সকল রোগের ঔষধ। একজন মানুষকে প্রতিদিন গড়ে ৭/৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। যেকোনো রোগের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো উচিত। দুশ্চিন্তার সব চেয়ে বড় ঔষধ হচ্ছে ঘুম। মানসিক রোগের রোগীদের প্রতিদিন বেশি বেশি ঘুমানো উচিত। মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায়ের মধ্যে ঘুম অন্যতম।

ভালো লাগার কাজ করুন
এমন কিছু কাজ আছে যেগুলো আপনাকে আনন্দ দেয়। আপনি আপনার অবসর সময়ে করেন যেমন গেম খেলা, গান শুনা, ছবি আঁকা, মুভি দেখা ইত্যাদি কাজ গুলো করুন। উক্ত ভালো লাগার কাজগুলো করলে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। যে বিষয়ে দুশ্চিন্তা করছেন ঐ বিষয়টা ভুলে যাবেন।

প্রাণ খুলে কথা বলুন
অনেক সমস্যা আছে যেগুলো প্রিয় কাছের মানুষের সাথে বলার কারণে আপনার মনটা একটু হালকা হবে। প্রিয় মানুষটি আপনাকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারে, সাহস জোগাতে পারে। এতে আপনার দুশ্চিন্তা অনেকটা লাখব হবে। মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায় এর মধ্যে এটি একটি অন্যতম উপায়।

ভালো স্মৃতি মনে করুন
ভালো স্মৃতি বলতে এমন কিছু বিশেষ মুহূর্ত যেটা আপনার মনে পড়লে ভালো লাগে। হতে পারে সেটি প্রিয় মানুষের সাথে কাটানো সময়, বাড়ির ছোট মানুষটি, নাহলে মা বাবার সাথে কাটানো বিশেষ কিছু সময় যেটি মনে পড়লে আপনার মুখে হাসি ফুটে।

মনোযোগ অন্যদিক দেওয়া
যে বিষয়টা নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা সে বিষয়টা ভুলে যান এবং আপনার মনোযোগ অন্যদিকে দিয়ে দিন। তাহলে বার বার আর মনে পড়বে না অতঃপর আপনার মন খারাপ বা মানসিক চিন্তা হবে না।

ব্রিদিং করা
ব্রিদিং করুন বেশি বেশি। দিনের মধ্যে একটি সময় নির্বাচন করুন তার সাথে একটি মনোরম পরিবেশ নির্বাচন করুন। পরিবেশটা শব্দমুক্ত হয়ে উচিত। ফুলের বাগান কিংবা বাড়ির ছাদের এক কোনায় বসে ব্রিদিং করুন। শ্বাস ভিতরে নিন এবং বাহির করুন এতে আপনার মন ভালো থাকার পাশাপাশি আপনার ফুসফুসের কার্যপ্রণালী ভালো থাকবে।

মাদক এড়িয়ে চলুন
মাদককে না বলুন। মাদক আপনার শরীর এবং মনের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে। অনেকে মনে করে মাদক আপনার দুশ্চিন্তা কমিয়ে দিবে তাই তারা সিগারেট, মদ, গাঁজা,হিরোইন ইত্যাদি মাদক সেবন করে যার কারণে তারা আরও বেশি মানসিক সমস্যাই ভুগে। একপর্যায়ে তারা মাদকাসক্ত হয়ে যায় এবং মানসিক রোগী হয়ে যায়। মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায় গুলোর মধ্যে মাদক এড়িয়ে চলা অন্যতম একটি উপায়।

ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববেন না
ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবায় জ্ঞানীর কাজ। কিন্তু অতিরিক্ত ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা আপনাকে মানসিক রুগী করে দিতে পারে। মানসিক চিন্তা থাকে মুক্তির জন্য আপনাকে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে না। আপনি কে, কি, কেন, কি হতে চান, কি করছেন, কি করবেন, আপনার পরিবারের কি হবে? এগুলো বিষয়ে একটু ভাবেন আহলে দেখবেন আপনার মানসিক চাপ আরও বেশি হচ্ছে। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববেন না।

কথা শেয়ার করুন
মনের কষ্টের কথা মা, বাবা, ভাইবোন অথবা বন্ধুবান্ধবী, প্রিয় মানুষের সাথে শেয়ার করতে পারলে বুকের চাপ কমে যায়। তাই সম্ভব হলে কথা শেয়ার করতে শিখুন।

ব্যায়াম করুন
সুস্থ দেহ সুন্দর মন। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মন এমনি খারাপ হয়ে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। শরীর ভালো থাকলে মন ভালো হয়ে যাবে।

পাত্তা না দেয়া
কোন সমসসাকে পাত্তা দিবেন না। মনে রাখবেন সমস্যাগুলো জটিল কিছু না প্রতিটি সমস্যার অসংখ্য সমাধান আছে। তাই সমস্যাগুলোকে ছোট মনে করে উড়িয়ে দিবেন বেশি ভাববেন না অর্থাৎ পাত্তা দিবেন না । যা হচ্ছে হোক নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকবেন।

খারাপ চিন্তাভাবনা বাদ দিন
ধরুন আপনার একটা সমস্যা হয়েছে এখন আপনি ঐ সমস্যা নিয়ে খারাপ কিছু ভাবনা ভেবে বসে আছেন। তাহলে কি হবে সমস্যাটি আরও বড় আকার ধারন করবে। চিন্তায় আপনার মানসিক সমস্যা দেখা দিবে। তাই কোন কিছু নিয়ে নেগেটিভ চিন্তা করবেন না।

প্রিয়জনকে নিয়ে ভাবুন
অনেক খারাপ সময় আছে যখন প্রিয়জনরা পাশে থাকে। আপনার খারাপ সময়ে তাদের নিয়ে ভাবুন দেখবেন মন ভালো হয়ে যাবে। প্রিয়জন হতে পারে আপনার মা, বাবা, বউ, বাচ্চা এবং আপনার ভালোবাসার মানুষ।

উপরে আমরা মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায় সম্পর্কে জেনেছি। আমরা যদি এই ২০ টি উপায় মেনে চলতে পারি তাহলে আমরা মানসিক রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো।

শেষকথা

সব মিলিয়ে বলা যাই যে, আমরা দৈনন্দিন জীবনে সবাই ছোট বড় সমস্যার মধ্যে থাকি। তাই আমাদের উচিত সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা। মানসিক রোগ সম্পকে জানতে হবে এবং মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তির ২০ টি উপায় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।

পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে ফলো দিয়ে পাশেই থাকবেন। পোস্টটি আপনার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন যারা মানসিক সমস্যাই পড়ে তাদের মাঝে শেয়ার করে জানার সুযোগ করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url