১৫ দিনে ওজন কমানোর ২০ টি উপায় জানুন

স্বাস্থ্যই সম্পদ। একজন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষের মধ্যে একজন। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা রোগা পাতলার জন্য চিন্তিত আবার অনেকে আছে যারা একটু ওজন বেশীর জন্য চিন্তিত। আমরা সবাই ফিট থাকতে চাই। কিন্তু ফিট থাকা এবং শরীর ফিট রাখার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় হয়না। সারাদিন নানারকম কর্মব্যাস্ততা মধ্যে থাকার জন্য আমাদের শরীরের ওজন কমানোর সময় হয়না। কোন ডায়েট কন্ট্রোল করার সময় হয়না। কিন্তু কিছু কৌশল অবলম্বন করলে আপনি চাইলে আপনার ওজন কমাতে পারেন। তাই আজকের পোস্টে আমরা ১৫ দিনে ওজন কমানোর ২০ টি উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

ওজন কমানো সহজ কোন কাজ নয় আবার কঠিন কোন কাজও নয়। কিছু কিছু নিয়ম কানুন এবং অভ্যাসের পরিবর্তন করলেই আপনি মাত্র ১৫ দিনে আপনার ওজন কমাতে সক্ষম হবে। আসুন জেনে নিই এইরকম ২০ টি উপায়।

খাবার গ্রহণ অনেক সময় থালার ওপর নির্ভর করে। বড় থালায় খাবার বেশি থাকে তাই বড় থালার পরিবর্তে ছোট থালা ব্যবহার করতে পারেন। আবার খাবার হাত দিয়ে না খেয়ে চামচ দিয়ে খেতে পারেন। হাত দিয়ে অনেক খাবার একসাথে মুখে দেওয়া যায়। কিন্তু চামচ দিয়ে অল্প অল্প করে খাবার মুখে দেওয়া হয়। তাই ওজন কমাতে সর্বপ্রথম উক্ত কাজটি করুন।

ফাস্টফুড পরিহার করুন। ফাস্টফুড বলতে অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার এবং কোমল পানীয়, সোডা, কোক ইত্যাদি বোঝায়। ফাস্টফুডে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে যা আপনার শরীরে মেদ, চর্বি তৈরি করে শরীরকে মোটা করে দিতে পারে।

স্বাস্থ্য কমাতে খাবার তালিকায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখুন। প্রোটিন আমাদের পেশিকে মজবুত শক্ত রাখে। এক্ষেত্রে আমাদের উদ্ভিদজ্জ প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন বিভিন্ন প্রকার ডাল খেতে পারেন। তাছাড়া দুধ, ডিম, মুরগির মাংস রাখতে পারেন। তবে লাল মাংস যেমন গরু এবং খাসীর মাংস এড়িয়ে চলুন কেননা এগুলো উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার।

সবজিতে থাকে পুষ্টি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই খাবারের মেন্যুতে প্রতিদিন অনেক রকম সবজি রাখুন। সম্ভব হলে সবুজ শাঁক খাবেন বেশি বেশি। তাই খাবারের থালায় প্রচুর পরিমাণে সবজি সাজিয়ে নিন।

১৫ দিন মিষ্টি জাতীয় খাবার থাকে দূরে থাকুন। মিষ্টি জাতীয় খাবারে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাছাড়া মিষ্টি খেলে আমাদের শরীরে অনেক ঘুম চলে আসে এবং শরীর মোটা হয়ে যায়। আর ভাত খাওয়া কমিয়ে দিন। ভাতে শর্করার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই অল্প করে রুটি খাওয়ার অভ্যাস করুন রুটিতে শর্করার পরিমাণ একটু কম থাকে। দিনে ও রাতে রুটি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।

ওজন কমানোর জন্য একেবারে না খেয়ে থাকা যাবে না। নিয়মমাফিক খান কিন্তু অল্প করে খান। তিনবেলা খাবার রুটিন করুন। অনেকবার খান কিন্তু অল্প অল্প করে খান।

ঘন ঘন আয়নার সামনে যাবেন। এতে করে আপনার মোটিভেট বাড়বে। যারা আয়নার সামনে ঘন ঘন যায় তাদের দ্রুত ওজন কমে কারণ তারা এই বিষয়ে বেশি চিন্তা করে য কীভাবে ওজন কমানো যায়। আর ওজন কমানোর জন্য সব নিয়ম মেনে চলে। তাই দিনের মধ্যে সময় পেলে আয়নার সামনে বসে থাকেন।

আপনার কাজের ওপর ক্যালরি নির্ভর করে। কাজ করে যতটুকু ক্যালরি বাড়তি থাকে সে অনুযায়ী আপনার ওজন বাড়ে। কাজে রুপান্তর করার পর বাড়তি শক্তিই ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ। ওজন কমাতে তাই হিসেব করে ক্যালরি খান।

পানির ওপর নাম জীবন। দিনে প্রচুর পরিমাণে পানি খান। পানি আমাদের শরীর আদ্র রাখে এতে খুদা কম লাগে পেট ভরা আছে মনে হয়। এবং আপনার খাওয়ার একটু কম খাবেন এতে ওজন কমে যাবে। দিনে অন্তত ১০ থেকে ১৫ গ্লাস পানি পান করুন।

সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত হাঁটতে হবে। হাঁটলে ওজন কমার পাশাপাশি আপনার হৃদরোগের ঝুকি অনেক কমে যাবে। তাই নিয়মিত বাগান অথবা ট্রেডমিলে হাঁটার অভ্যাস তৈরি করুন। ১৫ দিনে ওজন কমানোর ২০ টি উপায় আর মধ্যে এটি অন্যতম।

আপনার কাজের ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিন খাবার রুটিন তৈরি করুন। কখন কোন কোন খাবার খাবেন, কোন কোন খাবারে কেমন প্রোটিন এবং ক্যালরি আছে সে বিষয়ে চিন্তা করে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার রুটিন তৈরি করুন।

পুষ্টিকর ও পরিমিত খাবারের রুটিন করাকে ডায়েট করা বলে। ১৫ দিনে ওজন কমানোর ২০ টি উপায় এরমধ্যে ডায়েট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজ থেকে ডায়েট করুন।

ওজন কমাতে ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন ব্যায়াম করবেন তখন আপনার শরীরের চর্বিগুলো গলে ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যাবে। যার জন্য ওজন কমাতে ব্যায়াম এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিন ১ থেকে ২ ঘণ্টা হালকা থেকে ভারি ব্যায়াম করা উচিত।

তেল এবং চর্বি ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে তাই ওজন কমাতে তেল চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। অধিক তেলযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে হৃদরোগের মত সমস্যা হতে পারে। শরীরে অধিক চর্বি হলে আমাদের স্টকের সম্ভবনা বাড়ে।

টমেটো, গাজর, শসা ইত্যাদি সবজির সালাদ করে খান। বিশেষ করে শসার সালাদ খেলে আপনার শরীরের চর্বি অনেক কমে যাবে। নিয়িমিত ১৫ দিন শসা খেলে শারীরিক ওজন কমে যাবে। শসা আপনার গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে। তাই ওজন কমাতে খাবারের মেন্যুতে শসা রাখুন।

টক দইয়ের ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়ামের ইত্যাদি উপাদান থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যকে কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। তাছাড়া টক দইয়ে এই সব উপাদান থাকার কারণে টক দই আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।

প্রতিটি কাজে লক্ষ্য অন্যতম। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে লক্ষ্য না থাকলে সে জায়গায় পৌঁছানো যায় না। তাই ওজন কমানোর আগে আপনার লক্ষ্য নির্বাচন করুন যে আপনি ১৫ দিনের মধ্যে নিদিষ্ট পরিমাণ বয়স কমাবেন। তাহলে দেখবেন কাজের প্রতি আপনার একটা আগ্রহ বাড়বে।

আমাকে এই কাজটি করতেই হবে যে কোন মূল্যে এই রকম চিন্তাধারা তৈরি করুন। প্রতিটি কাজের আগে নিজেকে নিয়ে ভাববেন। আমি কে, কি করতে চাচ্ছি এগুলো নিয়ে নিজেকে উৎসাহী করুন। এতে আপনার কাজের প্রতি মনবল বাড়বে।

মিষ্টি জাতীয় খাবারে অনেক ক্যালরি থাকে তাই ওজন কমাতে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

সর্বশেষ একটি কথায় বলব যে, খাওয়ার সময় একটু কম খাবেন। খাওয়ার আগের চিন্তা করবেন নিজের শরীর নিয়ে, ওজন নিয়ে ভাববেন তাহলে দেখবেন খাওয়ার প্রতি একটু টান কম লাগছে।

উপরিক্ত ২০ টি উপায়ের কথা আলোচনা করা হল। উক্ত কাজগুলো সঠিকভাবে মানতে পারলে ১৫ দিনে ওজন কমানো সম্ভব।

ওজন বৃদ্ধির আসল কারণ ভুল খাদ্যাভ্যাস এবং সঠিক সময়ে ব্যায়াম না করা। ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে কর্ম ব্যাস্ততার জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনা আর এদিকে আমাদের ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়।আপনি আপনার ওজন কতটুকু কমাবেন সেটি নির্ভর করবে আপনার অভ্যাস এবং কাজের ওপর। তবে আপনি যদি এক নাগালে ১৫ দিন ওজন কমানোর ঘরোয়া উপায়গুলো পালন করেন তাহলে ১৫ দিনে ৫ থেকে ৬ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। বয়সভেদে কম কিংবা বেশি হতে পারে। অপরে আমরা ১৫ দিনে ওজন কমানোর ২০ টি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কেও যদি উক্ত ২০ টি উপায় ভালকরে মেনে চলে তাহলে ১৫ দিনে তার ওজন কমতে শুরু করবে।

আপনার ওজন কতটুকু বাড়বে কিংবা কমবে সেটি আপনার খাদ্যঅভ্যাস, ব্যায়াম এবং ডায়েট আর ওপর নির্ভর করে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে মাসে ৩ থেকে ৪ কেজি ওজন কমানো উচিত। আর আপনার যদি তাড়া থাকে তবে একমাসে আপনি ৮ থেকে ১০ কেজি ওজন কমাতে পারেন। তবে হটাত বেশি ওজন কমানো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আপনার শরীর অনেক দুর্বল করার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্তান্ত হতে পারেন। তাই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ধীরে ধীরে ওজন কমানো উচিত।

কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো ওজন কমাতে সাহায্য করে। আপনি দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে উক্ত কাজ গুলো করার পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত খাবার খেতে পারেন।

উক্ত পানীয়টি তৈরি করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে পানি, মধু ও দারুচিনির। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ মধু দিন। উক্ত গ্লাসে এক চিমটি দারুচিনির গুঁড়া দিয়ে মিশিয়ে খালি পেটে খেয়ে নিন। এই পানীয় আপনার শরীরে মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে গ্রীন টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা বাঙ্গালীরা সাধারণত চা পাগল হয়ে থাকি। সকালটা শুরু হয় এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দিয়ার মাধ্যমে। কিন্তু আমরা যে চা পান করি তা আমাদের শরীরের ক্ষতি করে কারণ আমরা দুধ, চিনি বেশি করে দিয়ে চা খাই। ওজন কমাতে আমাদের গ্রীন টি খাওয়া উচিত। এই চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ডায়াবেটিক রোগীর জন্য গ্রীন টি বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই ওজন কমাতে গ্রীন টি খেতে পারেন।

ওজন কমাতে মৌরির পানি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এই দানায় ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে তাই ওজন কমাতে সাহায্য করে। আবার মৌরির পানিতে এক বিশেষ উপাদান থাকে তাই খুদা কম লাগে।

দুই গ্লাস পানিতে জিরার গুঁড়া নিন। তারপর উক্ত পানিকে তাপ দিয়ে ফুটান। যতক্ষণ পর্যন্ত না জিরার সম্পূর্ণ উপাদান না বের হয় এবং দুই গ্লাস পানি এক গ্লাস পানিতে পরিণত না হয়। তারপর পানিটি খেয়ে নিন।

উপরিক্ত খাবার গুলো খালি পেটে খেলে আপনার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাবে।

সবমিলিয়ে বলা যায় যে, ইচ্ছে করলে উপায় হয় অর্থাৎ চেষ্টা করলে আপনি ১৫ দিনের মধ্যে আপনার ওজন কমাতে সক্ষম হবেন। ১৫ দিনে ওজন কমানোর ২০ টি উপায় মেনে চললেও আপনি আপনার ওজন কমাতে পারবেন।

আপনার কোন বন্ধু বেশি ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকলে তার কাছে পোস্টটি শেয়ার করে তাকে জানার সুযোগ করে দিন।