চাকুরীজীবীদের পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে বিস্তারিত জানুন
আপনি কি লোন নিয়ে চিন্তিত? কীভাবে লোন নিবেন, কোন ব্যাংক থেকে লোন নিবেন? কোন ব্যাংকে সুদের পরিমাণ কেমন? কোন ব্যাংকে সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি? পার্সোনাল লোন নিতে কি কি জামানত লাগে, কি কি কাগজপাতি লাগবে এই প্রশ্নগুলো কি আপনার মনে ঘুরপাক খায় তাহলে আজকের পোস্ট আপনার জন্য কেননা আজকের পোস্টে আমরা জানবো চাকুরীজীবীদের পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে?
সুতরাং লোন নেওয়ার পূর্বে আপনাকে ভালো করে যাচাই করে নিতে হবে। কারণ কিছু কিছু ব্যাংকে সুদের পরিমাণ অনেক বেশি আবার কোন ব্যাংকে একটু কম। যাচাই না করে লোন নিলে পরবর্তী সময়ে আপনাকে অনেক সমস্যা পোষাতে হবে। তাই চাকুরীজীবীদের পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে জেনে নিতে সম্পূর্ণ পোস্টটি ভালো করে পড়ুন।ভূমিকা
দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের অনেক সমস্যাই পড়তে হয়। সমস্যা এড়াতে টাকা প্রয়োজন হয়। আর আপনার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা নেই তাহলে কি করবেন এখন? একমাত্র ব্যাংক লোন বা ঋণ আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে। ঋণ হল নিদিষ্ট পরিমাণে কিছু অর্থ যা ঋণকারি নিদিষ্ট সময়ের জন্য কোন ব্যাংক অথবা ঋণদান প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে উক্ত আসলসহ কিছু বাড়তি অর্থ যেটাকে আমরা মুনাফা বা সুদ বলি প্রদান করতে হয়। উক্ত টাকা আপনি একবারে নাহলে একটি নিদিষ্ট সময় পর পর পরিশোধ করতে পারেন। ঋণ নিতে কিছু জামানত এবং প্রয়োজনীয় কাগজ লাগে। এখন আমরা জানবো চাকুরীজীবীদের পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে সে বিষয় সম্পর্কে।
পার্সোনাল লোন ( চাকুরীজীবীদের জন্য )
সাধারণ মানুষের জন্য লোনের সিস্টেম আলাদা এবং চাকরিজীবীদের জন্য লোনের সিস্টেম আলাদা। প্রতি ব্যাক্তি ভেদে সুদের পরিমাণও আলাদা থাকতে পারে। এখন আমরা জানবো চাকুরীজীবীদের পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে?
সর্বোচ্চ ২০,০০,০০০/-( বিশ লক্ষ টাকা )
সর্বনিম্ন ২,০০,০০০/-( দুই লক্ষ টাকা )
** সরকারি চাকরিজীবী হলে বেতন সর্বনিম্ন ২০,০০০/=
** বেসরকারি চাকরিজীবী হলে বেতন সর্বনিম্ন ৩০,০০০/=
ইন্টারেস্ট রেট ১১.২৫% টেকওভার ১০.৫% । মর্টগেজ এর প্রয়োজন নাই।
মেয়াদ সর্বোচ্চ ( ০৩- ০৫ ) বছর।
যেকোনো ব্যাংক হতে হবে।
এবং গার্মেন্টস এর ক্ষেত্রে ৫০,০০০/- ।
পার্সোনাল লোনের জন্য যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন
এখন আমরা জানবো একজন চাকরিজীবীর পার্সোনাল লোন নিতে কি কি কাগজপত্র লাগবে।
***আবেদনকারী
- আবেদনকারীর ছবি ৩ কপি ( ল্যাব প্রিন্ট )।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- টিন সার্টিফিকেট।
- স্যালারি সার্টিফিকেট ( ব্যাংকের ফরম্যাট অনুযায়ী ) পে স্লিপ।
- স্যালারি স্টেটমেন্ট।
- বিএমডিসি সার্টিফিকেট ( শুধুমাত্র ডাক্তারদের জন্য প্রযোজ্য )।
- প্রফেশনাল সার্টিফিকেট।
- জব আইডি কার্ড অথবা প্রত্যয়ন পত্র।
- অন্যান্য আয়ের প্রমানপত্র ( শিক্ষক ও ডাক্তারদের জন্য প্রযোজ্য )।
- লোন অনুমদনপত্র ( যদি অন্য কোন ব্যাংকে লোন থাকে )।
***গ্যারান্টার
- পরিবার ( স্বামী/ স্ত্রি/বাবা/মা যে কোন এক জন )।
- ছবি ০২ কপি ( ল্যাব প্রিন্ট )।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- জব আইডি/ প্রত্যয়ন পত্র ( যদি চাকুরি করে )।
*** অফিস কলিগ
- ছবি ০১ কপি ( ল্যাব প্রিন্ট )।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- জব আইডি/প্রতয়নপত্র।
উপরিক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে আপনি পার্সোনাল ঋণ নিতে পারেন। আজকের আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে চাকুরীজীবীদের পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে এই সম্পর্কে।
ব্র্যাক ব্যাংকে লোন নিতে কি কি লাগে ?
আপনি যদি কোন ব্যাংকে লোন নিতে চান তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে জানতে হবে কোন ব্যাংকে লোন নিতে কি কি লাগে সে বিষয় সম্পর্কে। সব কিছু জানা থাকলে আপনার ঋণ নিতে এবং ঋণ সম্পর্কে জানতে আর ঝামেলা পোহাতে হবে না। আমাদের এখনকার জানার বিষয় হল ব্র্যাক ব্যাংকে লোন নিতে কি কি লাগে ?
বয়স
প্রথমত আপনাকে প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। বয়স সাধারণত ২৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। একদম কম বয়সী এবং বেশি বয়সী মানুষকে ব্যাংক ঋণ দেই না । পরবর্তী সময়ে যেন ঋণ পরিশোধ করতে কোন সমস্যা না হয় তাই বয়সটা ব্যাংক যাচাই করে থাকে।
আয়
বয়সের পর ব্যাংক দেখবে আপনার আয়ের উৎস কি। আপনি কি করেন? মাসে কত টাকা ইনকাম করেন? ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার সময় সমস্যা করবেন কি না? তারা আপনার থাকে টাকা উশুল করতে পারবে কি? কীভাবে আপনি ঋণ পরিশোধ করবেন? এগুলো সব বিষয়ে চিন্তা করে ব্যাংক আপনার আয়ের উৎস দেখবে।
আবেদনপত্র
ব্যাংকে ঋণ নিতে আপনাকে ব্যাংক ম্যানেজার বরাবর একটি আবেদনপত্র দিতে হবে।
পরিচয়পত্র
আপনি কে? আপনার পরিচয় কি? আপনি কি বাংলাদেশের নাগরিক? ব্যাংক অবশ্যই এই বিষয়গুলো বিবেচনা করবে। যার জন্য আপনার ক্যাশ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিবে। আপনি কোন এলাকার বাসিন্দার এটা ব্যাংক নিশ্চিত করবে।
ছবি
লোন নিতে আপনাকে প্রতিটি ব্যাংকে আপনার ৩/৪ কপি ল্যাব প্রিন্ট ছবি জমা দিতে হবে। সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংগ্রহ করতে হবে।
আয়ের প্রমান
আপনি কোন কোন উৎস থেকে কত টাকা আয় করেন তার ডকুমেন্ট ব্যাংক আপনার ক্যাশ থেকে সংগ্রহ করবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক আপনার একাউন্টের ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আয়কর রিটার্ন ইত্যাদি বিষয়ের একটি তথ্য সংগ্রহ করবে।
জামানত
জামানত বলতে আপনি ব্যাংক থেকে কোন জিনিসটা দেখিয়ে টাকা নিবেন। আপনি যদি টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তাহলে ব্যাংক আপনার কোন সম্পদটি দখল করবে সেটাকে জামানত বলা। জামানত হতে পারে কোন ব্যাক্তি অথবা আপনার কোন জমিজমা, দোকান, বাড়ি ইত্যাদি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সুদের হার কত ?
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কৃষি কাজের জন্য কৃষি লোন দিয়ে থাকে। কৃষি বলতে শস্য, মৎস্য, ডেইরী, পোল্ট্রী ইত্যাদি। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক উক্ত কাজের জন্য স্বল্প সুদে কৃষি লোন দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কৃষি ব্যাংকে বাৎসরিক সুদের পরিমাণ হাজারে ৮%। তবে কিছু কিছু বিশেষ কারণ অথবা ছাড়ে সুদের হার কম বেশি হতে পারে।
গ্রামীণ ব্যাংকে সুদের হার কত ?
বাংলাদেশের নোবেলজয়ী মানব ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষুদে ঋণ প্রকল্পের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের জন্য সুদের হার কমিয়ে দিয়েছেন।গ্রামীণ ব্যাংকে বিভিন্ন ঋণের সুদ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে যেমনঃ
- উৎপাদনশীল খাত- ২০%
- ব্যবসা ও বাণিজ্যো- ১০%
- গৃহস্থলি ব্যয়- ৮%
- শিক্ষা ও চিকিৎসা- ৫%
ডাচ বাংলা ব্যাংকে সুদের হার কত ?
ডাচ বাংলা ব্যাংকে সুদের পরিমাণ নির্ধারিত করা হয় সঞ্চয়ী হিসাব ও লোনের ওপর ভিত্তি করে। সঞ্চয়ী হিসাব ও লোনের ওপর নির্ভর করে সুদের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। লোনের ভিত্তিতে সুদের হার হয়। সেক্ষেত্রে পার্সোনাল লোনের জন্য সুদের হার ৮% হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু লোনের জন্য সুদের হার ১০ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কোন ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া উচিত ?
আসলে লোনের বিষয়টা নিজের লেনদেন ব্যাংক কর্মকর্তার ব্যবহার এবং সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। তাছাড়া সুদের পরিমাণ আপনার সঞ্চয়ী হিসাব ও লোনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় সব ব্যাংকে। কৃষি অর্থাৎ সরকারী ব্যাংকগুলোতে সুদের পরিমাণ একটু কম হয়ে থাকে। লোন নিতে কিছু কিছু বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সতর্কতার সাথে নিজের আয়ের ওপর ভিত্তি করে ঋণ গ্রহণ করা উচিত নাহলে ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে। চাকুরীজীবীদের পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে জানতে হবে।
লোন সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ?
ঋণ একটি আমানত। ইসলামের দৃষ্টিতে আমানত রক্ষা করে একজন মুসলিমের কর্তব্য কিন্তু ঋণ নিয়ে আমরা ব্যাংকে যে অতিরিক্ত টাকা বা সুদ দেয় এটা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। সুদ দেওয়া এবং নেওয়া দুইটাই হারাম। সুদের সর্বনিম্ন গুনাহ আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করা ( নাউজুবিল্লা )। তাই আমাদের উচিত যতটা সম্ভব ঋণ অর্থাৎ সুদ থেকে নিজেকে বিরত রাখে।
শেষকথা
সব মিলিয়ে বলা যায়, ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে আমাদের উচিত লোন, সুদের হার, কিস্তি, সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে আগে জেনে নেওয়া। উক্ত বিষয় সম্পর্কে ধারণা না থাকলে আমাদের ওপর ঋণের বোঝা পড়ে যেতে পারে।
আপনার আশেপাশে যে সকল বন্ধুবান্ধব ব্যাংকে ঋণ নিতে চাই কিন্তু এই সম্পর্কে কোন ধারণা নাই তাদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করি তাদের জানার সুযোগ করে দিন। আজকের পোস্টে আমরা চাকুরীজীবীদের পার্সোনাল লোন নিতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url