প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা - প্যানিক এটাকের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
বর্তমান সময়ে মানুষ নানারকম রোগে আক্রান্ত হয় তারমধ্যে সবচেয়ে বড় এবং তাৎক্ষণিক রোগ হচ্ছে এটাক। তাই আজকের পোস্টে আমরা একটি প্যানিক এটাক নিয়ে আলোচনা করব। প্রিয় পাঠক আজকের পোষ্টের মূল বিষয় হচ্ছে প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা এবং প্যানিক এটাকের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা আরো জানবো প্যানিক এটাকে লক্ষণ, প্যানিক এটাক কেন হয়, প্যানিক এটাক থেকে কি মৃত্যু হয়, প্যানিক এটাক থেকে মুক্তির উপায় ইত্যাদি বিষয়ে। আপনি যদি প্যানিক এটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য।
এই বিষয়ে জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
প্যানিক এটাক কি ?
প্রথমে আমরা জানবো প্যানিক এটাক কি সেই সম্পর্কে। প্যানিক এটাক হচ্ছে হঠাৎ ভয় পেয়ে ভীতি ও উদ্বিগ্ন অনুভূতি করা যার কারণে আমাদের হার্টবিট বেড়ে যায়, মাথা ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হঠাৎ করেই শরীরের অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয় যার কারণে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হয়। হঠাৎ করে উদ্বিগ্ন বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা হার্ট ফেইল এর সমস্যায় পড়তে পারি। যার কারণে আমাদের শারীরিক অনেক ক্ষতি এমনকি মৃত্যু হতে পারে।
প্যানিক মানে ভীত অনুভব করা। মানুষ সাধারণত নানারকম কারণে বেশি ভয় পেয়ে গেলে বা চিন্তিত হয়ে গেলে প্যানিক এটাকে আক্রান্ত হয়। শিশুদের আতঙ্ক অনুভব হলে প্যানিক এটাকে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। প্যানিক এটাকের চিকিৎসা না করালে এটি শরীরের নানারকম ক্ষতি এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
যাই প্যানিক এটাকে আক্রান্ত হয় তাই নিজেও জানেনা যে তার সাথে কি ঘটতে চলেছে বা ঘটছে। আজকের পোস্টে আমরা জানব প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা এবং প্যানিক এটাকের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত। তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এবং সমাধান পেতে সম্পূর্ণ পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
প্যানিক এটাক কেন হয় ?
প্রিয় পাঠক বৃন্দ উপরের পড়া থেকে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি প্যানিক এটা কি সেই সম্পর্কে। এখন আমরা জানব প্যানিক এটা কেন হয়। আজকের পোষ্টের আমাদের জানার বিষয় হচ্ছে প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা ও প্যানিক এটাকের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এটা কেন হয় সে সম্পর্কে।
প্যানিক এটাক আসলে কোন কারণে হয় সেটা বলা মুশকিল। কারণ বিভিন্ন মানুষ দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন রকম সমস্যায় পড়ে তাই বিভিন্ন জনার প্যানিক এটাকের কারণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে নিচে কিছু প্যানিক এটাকের উল্লেখযোগ্য কারণ দেওয়া হলঃ
- একাকীত্ব অনুভব করা
- প্রিয়জনের মৃত্যু
- পারিবারিক চাপ
- সংসারিক অশান্তি
- শারীরিক দুর্বলতা
- ব্যবসা ক্ষেত্রে বা কর্মক্ষেত্রে অশান্তি
- পরীক্ষায় ফেল/ খারাপ রেজাল্ট
- অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ পান
- বন্ধুত্ব বা পরীক্ষা নিয়ে মানসিক চাপ
- বংশ পরম্পরায় মানসিক চাপ
- অবহেলা বা নির্যাতনের শিকার
- দৈনন্দিন জীবনে নানা কাজে পিছিয়ে পড়া
- জীবন নিয়ে বেশি চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন হওয়া
- রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাব
- শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা
উপরের তো কারণগুলো প্যানিক এটাকের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উপরোক্ত কারণ ছাড়াও ব্যক্তিভেদে আর অন্যান্য কারণে প্যানিক এটাক হতে পারে। আজকের পাঠের মূল বিষয় হচ্ছে প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা ও প্যানিক এটাকের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত।
প্যানিক এটাক এর লক্ষণ
প্রিয় পাঠক উপরিক্ত তথ্য থেকে আমরা প্যানিক এটাক কি, এবং প্যানিক এটাকের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। আজকের পোস্ট থেকে আমরা প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা এবং প্যানিক এটাকের ওষুধ সম্পর্কে জানব। তাহলে চলুন এখন প্যানিক এটাক এর লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
- হৃদস্পন্দন হঠাৎ বেড়ে যাওয়া
- হঠাৎ অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি হওয়া
- নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা
- শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
- শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ঘাম হওয়া
- হঠাৎ শরীর কাঁপুনি দিয়ে ওঠা
- হালকা মাথা ব্যথা করা
- বুক ধরফর করা
- কানে ভারি শব্দ আসা
- উকি অথবা বমি বমি ভাব হওয়া
- চোখ দিয়ে পানি পড়া
- অচেতন হয়ে যাওয়া
- হাত-পা ঝিরঝির করা
- পেট ফুলে যাওয়া
- চোখের নিচে কালো দাগ পড়া
- বুকে প্রচুর চাপ অনুভব করা ইত্যাদি।
প্যানিক এটাকের কারণে উপরিক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে। লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
প্যানিক এটাক থেকে কি মৃত্যু হয় ?
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, প্যানিক এটাক থেকে কি মৃত্যু হয়? জি অবশ্যই হতেই পারে। কেননা প্যানিক এটাক সাধারণত হঠাৎ করেই হয়ে থাকে। কখন হবে তার কোন সঠিক সময় নেই। তবে মানুষ ভেদে এর সময়কাল বিভিন্ন রকম হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই প্যানিক এটাক ২০ থেকে ৩০ মিনিট স্থায়ী হতে পারে। তবে ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত সময় তীব্র পরিস্থিতি হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে যেহেতু মানুষ আতঙ্কিত হয় এবং হার্টবিট অধিক ক্রিয়াশীল হয় সেক্ষেত্রে হার্ট ফেইলের মত সমস্যা হতে পারে এবং মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটা নির্ভর করবে আপনার আতঙ্কিত বা প্যানিক এটাক এর মাত্রার ওপর। তাই বলা যায় প্যানিক এটাক থেকে মৃত্যুও হতে পারে। আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানতে পারবো, প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা ও প্যানিক এটাকের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত।
প্যানিক এটাক থেকে মুক্তির উপায়
আমরা উপরের তথ্য থেকে প্যানিক এটাক সম্পর্কে নানা রকম তথ্য জেনে গেছি। এখন আমরা জানব প্যানিক এটাক থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কেঃ
- প্রথমত লম্বা শ্বাস নিন
- বেশি বেশি পানি পান করুন
- নিরাপদ স্থান খুঁজুন
- পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন
- প্রয়োজনে মাথায় ঠান্ডা পানি দিন
- প্রিয় মানুষের সাথে একটু কথা বলুন
- নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করুন
- পছন্দের কাজগুলো করার চেষ্টা করুন
- পরিবারের লোকজনের সাথে বেশি বেশি কথা বলুন
- যে কাজগুলো আপনাকে আনন্দ দেয় সেগুলো করুন
উপরোক্ত কাজগুলো প্যানিক এটাক থেকে মুক্তির জন্য নিয়মিত করতে পারেন। খুব বেশি সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। আজকের পোস্টে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে, প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা এবং প্যানিক এটাকের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত।
প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা
প্যানিক এটাক সাধারণত শিশু কিশোরদের মাঝে বেশি দেখা যায়। কারণ তারা বিভিন্ন বিষয়ে উদ্দিগ্ন বেশি হয় এবং চিন্তা বেশি করে। তাই প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা হিসেবে প্রথমে রোগ নির্ণয় করতে হবে যে কেন সমস্যাটি হচ্ছে,সেটি দ্রুত সমাধান করা এবং তাকে বোঝানো দরকার। প্যানিকের প্রথম এবং প্রধান চিকিৎসা হলো রোগীকে আশ্বস্ত করা বা বোঝানো যে তার কিছুই হয়নি।
প্রয়োজনে তাকে উদ্বিগ্নতার ঔষধ গুলো দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া রোগীকে কাউন্সিলিং করা এবং তার বিহেভিয়ার থেরাপি প্রদান করা দরকার। প্রয়োজনে তাকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞর সাহায্য নিতে হবে। তবে প্যানিক এটাক এর সবচেয়ে বড় চিকিৎসা হচ্ছে তাকে বোঝানো এবং আশ্বস্ত করা। তার প্রিয় কাজগুলো এবং কথাগুলো করতে দেওয়া এবং বলা।
প্রিয় মানুষের সাথে সময় অতিবাহিত করতে দেওয়া। এগুলোই প্যানিক এটাকের প্রধান চিকিৎসা। আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানতে পারলাম প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা ও প্যানিক এটাকের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত।
প্যানিক এটাকের ঔষধ
আজকের পোস্ট থেকে আমরা প্যানিক অ্যাটাক সম্পর্কে নানা রকম তথ্য জেনে গেছি। আমরা এখন চাইলেই প্যানিক এটাকের চিকিৎসা নিতে পারব দিতে পারব। এখন আমরা প্যানিক এটাকের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। প্যানিক এটাকের থেকে মুক্তির জন্য যে কাজগুলো করা লাগবে সে কাজের বর্ণনা আমরা উপর থেকে ইতিমধ্যেই জেনে গেছি।
উক্ত কাজগুলো নিয়মিত করলে প্যানিক এটাকের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। তারপরও ডাক্তারগণ প্যানিক এটাকের কিছু ঔষধ সাজেস্ট করেন যেমনঃ
- Flutop 20Mg ( ফ্লুটপ ২০ এমজি )
আরও ব্যবহার করা হয় বেনজোডিয়াজেপাইন জাতীয় ঔষধ। এই জাতীয় ঔষধ সাধারণত প্যানিক ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, পেশী শিথিলকরণ, অনিদ্রা, টিক ডিসঅর্ডার, খিঁচুনি, অ্যালকোহল প্রত্যাহার, সাধারণ উদ্বেগজনিত ব্যাধি ইত্যাদি রোগের জন্য ব্যবহিত হয়। তাই অনেক ডাক্তার প্যানিক এটাকে চিকিৎসায় এই জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে থাকে।
প্রিয় পাঠক আজকের পর থেকে আমরা প্যানিক এটাক সম্পর্কে নানা রকম তথ্য জেনেছি। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা এবং প্যানিক এটাকের ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত।
লেখকের মন্তব্য
আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানতে পারলাম প্যানিক এটাক এর চিকিৎসা এবং প্যানিক এটাকের ওষুধ সম্পর্কে। আমরা আরো জেনেছি প্যানিক এটা কি, প্যানিক এটা কেন হয়, প্যানিক এটাকে লক্ষণ, প্যানিক এটাক থেকে মুক্তির উপায় ইত্যাদি বিষয়ে।
সর্বোপরি পোস্টটি ভালো লাগলে একটি লাইক দিয়ে এবং ফলো দিয়ে পেজের সাথেই থাকবেন। পড়া নিয়মিত আপনাদের জন্য তথ্যবহুল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করি। বন্ধুদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে যারা এই সমস্যায় ভুগে তাদের সমস্যা সম্পর্কে জানার এবং প্রতিকার করার সুযোগ করে দিন।
রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url