লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয় - লো প্রেসার হলে করণীয় কি বিস্তারিত জানুন
প্রিয় বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় হচ্ছে লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয় এবং লো প্রেসার হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা আরো জানবো লো প্রেসার কত, লো প্রেসারের ঔষধের নাম, লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত এবং হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত। আপনি অথবা আপনার পরিবারের কোন ব্যক্তি যদি লো প্রেসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্যই কেননা আজকের পোস্টে আমরা লো প্রেসার জনিত সকল সমস্যার সমাধান সম্পর্কে আলোচনা করব।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক লো প্রেসার জনিত বিভিন্ন সমস্যাবলী ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত।
লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয়
লো প্রেসার বলতে আমরা সাধারণত নিম্ন রক্তচাপকে বুঝি। অর্থাৎ শরীরের রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে গেলেই আমরা তাকে লো প্রেসার বলি। সাধারণত রক্তচাপ দুটি পরিমাপের উপর নির্ভর করে একটি হলো সিস্টোলিক রক্তচাপ এবং অপরটি হল ডায়াস্টলিক রক্তচাপ। সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিলিমিটার এর কম এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মিলিমিটারের কম থাকা উচিত, এগুলোকে স্বাভাবিক রক্তচাপ বলে। আর এর চেয়ে বেশি হলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বলে অভিহিত করা হয় এবং নিচে হলে নিম্ন রক্তচাপ অর্থাৎ লো প্রেসার বলা হয়।
অর্থাৎ সিস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মিলিমিটারের কম এবং ডাইস্টোলিক রক্তচাপ ৬০ মিলিমিটারের কম হলেই তাকে নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার বলে। সুতরাং বোঝাই গেল নিম্ন রক্তচাপ হচ্ছে ৯০/৬০ মিলিমিটার। দিনে বিভিন্ন সময় আমাদের শরীরের রক্তচাপ কম বেশি হতে পারে। পরিশ্রম, ব্যায়াম, পানিশূন্যতা, বিশ্রাম ইত্যাদির সাথে রক্তচাপের সম্পর্ক রয়েছে। তাই কোন কোন সময় শরীরের রক্তচাপ অর্থাৎ প্রেসার একটু কমে যেতে পারে তার মানে এই নয় যে আপনি লো প্রেসারের রোগী।
নিম্ন রক্তচাপ অর্থাৎ লো প্রেসার কোন রোগ নয় এটি কোন বড় রোগের সংকেত অর্থাৎ উপসর্গ। তাই এই বিষয়ে পূর্বেই সচেতন হতে হবে। লো প্রেসারে যে যে সমস্যাগুলো হতে পারে তা হলোঃ
- হরমোনজনিত সমস্যা (থাইরয়েড ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির হরমোন সমস্যা হতে পারে)।
- হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিওর ও হার্ট ভালভের সমস্যা হতে পারে।
- ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা জনিত সমস্যা।
- শরীরের রক্তশূন্যতা বা পানি শূন্যতায় ভোগা।
- বমি বা বমি বমি ভাব হওয়া।
লো প্রেসারে উপরিক্ত সমস্যাগুলো হতে পারে। অর্থাৎ লো প্রেসারে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই লো প্রেসার সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। উপরিক্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারলাম লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
লো প্রেসার হলে করণীয় কি
লো প্রেসার হলে অনেকেই অনেক চিন্তিত থাকে। রক্তচাপ কমে যাওয়া অর্থাৎ লো প্রেসার হলে চিন্তিত হওয়ার কিছুই নেই। অনেকেই ধারণা করে যারা রোগা পাতলা এবং দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী তারা নিম্ন রক্তচাপ অর্থাৎ লো প্রেসারে ভূগে। এ ধারণাও ভুল। পূর্বে আমরা আলোচনা করেছি সিস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মিলিমিটার এবং ডায়াস্টলিক রক্তচাপ ৬০ মিলিমিটারের কম হলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বা লো প্রেসার বলে।
রক্তচাপ যদি খুব বেশি কমে যায় তাহলে আমাদের কিডনি, মস্তিষ্ক ও হৃদপিন্ডের সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হয় না। যার ফলে শরীরে নানা রকম অস্বাভাবিকতা ও অসুস্থতা দেখা দেয়। তাই নিম্ন রক্তচাপে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানতে পারলাম লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত। তাহলে চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক লো প্রেসার হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- একই স্থানে অনেকক্ষণ বসে বা শুয়ে থাকা যাবে না।
- ঘন ঘন হালকা খাবার খাওয়া উচিত।
- স্যুপ, কফি, ডাবের পানি, ঘোল, ফলের রস ইত্যাদি রক্তচাপ বাড়িতে সাহায্য করে।
- অনেকক্ষণ বসে বসে বা শুয়ে থাকার পর সাবধানে চলাচল করা।
- খালি পেটে থাকলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে তাই ভরপেট থাকা।
- প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় স্যালাইন ও গ্লুকোজ রাখুন।
- অধিক প্রেসার লো হলে এক চিমটি লবণ খেতে পারেন।
- দুধ, ডিম ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন।
লো প্রেসারে উপরোক্ত কাজগুলো নিয়মিত করতে পারেন তাহলে আপনার লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং যেকোনো ধরনের জটিল সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। অন্যথায় দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন।
লো প্রেসারের ঔষধের নাম
উপরিক্ত তথ্য থেকে আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত। লো প্রেসারে সাধারণত ডাক্তারগণ কিছু কিছু ঔষধ সাজেস্ট করে কিন্তু আমাদের উক্ত ঔষধ বেশি খাওয়া উচিত নয়। প্রাকৃতিক উপায়ে কিছু খাবার গ্রহণ করে লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। উপরে আমরা ইতিমধ্যেই সেই সম্পর্কে আলোচনা করেছি। উপরোক্ত খাবারগুলো নিয়মিত খেলে লো প্রেসার অটোমেটিক স্বাভাবিক প্রেসারে পরিণত হবে।
লো প্রেসার এর ডাক্তারগন সাধারণত বেশি বেশি স্যালাইন এবং ডিম খেতে বলেন। তাই লো প্রেসারের প্রথম এবং প্রধান ওষুধ হচ্ছে খাবার। লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আপনি আয়রন, বি ১২, ভিটামিন সি ও ফলেট খেতে পারেন এগুলো রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। আবার প্রয়োজনে ওআরএস খাওয়াতে পারেন অথবা স্যালাইন ওয়াটার খেতে পারেন। ডাক্তারগন খুব সহজে কোন ঔষধ সাজেস্ট করে না। তাই লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।
লো প্রেসার কত
অনেকে প্রশ্ন করে লো প্রেসার কত? আমরা জানি প্রেশার পরিমাপ করা হয় দুটি চাপ পরিমাপের উপর। একটি হচ্ছে সিস্টোলিক এবং অপরটি হচ্ছে ডায়াস্টোলিক। স্বাভাবিক রক্তচাপ হচ্ছে ১২০/৮০, অর্থাৎ সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিলিমিটার এর কম এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মিলিমিটার এর কম হলে সেটি স্বাভাবিক রক্তচাপ। অন্যদিকে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক চাপ যদি ৯০/৬০ মিলিমিটার বা তার কম হয় তাহলে নিম্ন রক্তচাপ অর্থাৎ লো প্রেসার বলা যায়। আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত
লো প্রেসারের প্রধান ঔষধ হচ্ছে খাবার। নিয়মিত খাবার গ্রহন করলে লো প্রেসার জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে। তাই ডাক্তারগণ লো প্রেসারের ঔষধ হিসেবে কিছু কিছু খাবার সাজেস্ট করে। লো প্রেসারে তরল পানিজাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হয়। যেমনঃ
- স্যালাইন
- ডাবের পানি
- ফলের রস
- ঘোল
- দুধ
- ডিম
- লেবুর রস
- দুধ
- গ্লুকোজ
- কফি
উপরিক্ত খাবারগুলো খেলে লো প্রসার স্বাভাবিক হয়ে যায়। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে লো প্রেসার থেকে বাঁচতে আপনাদের নিয়মিত উপরিক্ত খাবার গ্রহন করতে হবে। আজকের আলোচনার বিষয় ছিল লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।
হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ
কিছু কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যায় হাই প্রেসার বা লো প্রেসার সম্পর্কে। তাই আমাদের সর্বপ্রথম হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে চলুন হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নিই। আজকের আলোচনার বিষয় ছিল লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।
হাই প্রেসারের লক্ষণঃ
- বেশি বেশি প্রসাব হয়।
- হার্টের ব্যাথা হয়।
- হার্টের দূর্বলতা বা হার্ট ফেইল হয়।
- নাক দিয়ে রক্তপড়া।
- বমি বা বমি বমি ভাব।
- গায়ে কাঁপুনি দেওয়া।
- দৃষ্টিশক্তিতে পরিবর্তন।
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
লো প্রেসারের লক্ষণঃ
- মাথা ঝিমঝিম করা
- মাথাঘোরা
- দূর্বলতা অনুভব করা
- হটাৎ দাড়ালে মাথা চক্কর দেওয়া।
- চোখে আবছা (অন্ধকার) দেখা।
- প্রচুর পিপাসা লাগা।
- হটাৎ জ্ঞান হারানো।
- হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাওয়া।
- শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
- কম প্রসাব হওয়া।
- হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক।
লেখকের শেষকথা
আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানলাম লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয় এবং লো প্রেসার হলে করণীয় কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা আরো জেনেছি লো প্রেসার কত, লো প্রেসারের ঔষধের নাম, লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত এবং হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত।
সর্বপরি পোস্টটি ভালো লাগলে একটি লাইক ও ফলো দিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকবেন। বন্ধুদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাদের লো প্রেসার সম্পর্কে জানতে সাহায্য করুন, ধন্যবাদ।
রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url