ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে - বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত

অন্যান্য জ্বরের মতো ডেঙ্গুজ্বরও একটি ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণত এটি এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এডিস মশা কামড়ানোর পাঁচ থেকে সাত দিন পর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। আজকের আর্টিকেল থেকে জানবো ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে এবং বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে। আমরা আরো জানবো ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে, ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে এবং ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ওষুধ খেতে হবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। আপনি অথবা আপনার পরিবারের কেউ যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য।  
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে
কেননা আজকের পোস্টে আমরা ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কিত নানা রকম প্রশ্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে 

অন্যান্য জ্বরের মতো ডেঙ্গু জ্বর হলেও আপনি গোসল করতে পারবেন। তবে প্রধান সমস্যা হচ্ছে জ্বর হলে আপনার শরীরের বাহ্যিক তাপমাত্রা অনেক কমে যায় যার কারণে গোসল করতে গেলে অনেক বেশি ঠান্ডা লাগে। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন কিংবা হালকা গরম কুসুম পানি দিয়ে সম্পূর্ণ শরীর মুছে ফেলতে পারেন। জ্বর হলে আমাদের দেশে মাথায় জল পটি দেওয়া অথবা মাথায় পানি ঢেলে দেয়া হবে জনপ্রিয়। 


শরীরে জ্বর আসলে আপনি যদি গোসল না করেন তাহলে আপনার শরীর অস্বস্তিবোধ করতে পারে এবং শরীর ম্যাস ম্যাস করতে পারে। তাছাড়া সাময়িক গোসল করালে রোগীর শরীর হতে পারে। তাই রোগীকে সতেজ রাখতে অন্তত হালকা পানি দ্বারা গোসল করানো উচিত। যদি পানি দ্বারা সম্পূর্ণ শরীর ধৌত করে থাকেন তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনার চুল শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে অন্যথায় জ্বরের পরিমাণটা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। 

ডেঙ্গু জ্বর হলে আপনি গোসল করবেন, গা মুছবেন নাকি মাথা ধুয়ে ফেলবেন এটি নির্ভর করে আপনার জ্বরের মাত্রার উপর। তবে গোসলের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিয়ম গুলো মেনে চলতে হবে।

  • হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে
  • শরীরের ক্লান্তি লাগলে গোসল করা যাবে না
  • অতিরিক্ত সময় গোসল করা যাবে না
  • শরীরে বেশি পরিমাণে পানি ঢালা যাবে না
  • গোসলের পরও ভালোভাবে পুরো শরীর (চুলসহ) শুকিয়ে হতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর অনেক মারাত্মক একটি জ্বর তাই এই জ্বরে ভুগে থাকলে অবশ্যই ভালোভাবে রোগীর যত্ন নিতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শের মতো ওষুধ সেবন করতে হবে। আজকের আর্টিকেলে আলোচনার বিষয় হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে এবং বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা ইতিমধ্যেই ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যাবে কিনা সেই সম্পর্কে জেনে গেছি।

বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ 

প্রিয় বন্ধুরা উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে সেই সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ। বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ একই রকম হতে পারে আবার ভিন্ন রকম হতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব খুবই বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয় সেটার অবশ্য বিশেষ কিছু কারণ আছে। 


বাচ্চারা বড়দের মতো এতোটা সচেতন না, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বড়দের তুলনায় অনেক কম। তারা এদিক সেদিক খেলাধুলা করার ফলে যেকোন সময় এডিস মশার কামড় খেতে পারে। কিন্তু বাসায় মা বাবাকে আর বলতে পারে না। তাদের কিছু শারিরীক লক্ষ্মণ দেখে মা বাব্ বুঝতে পারে যে সে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। লক্ষ্মণগুলো নিম্নরুপঃ

হঠাৎ শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস বৃদ্ধি
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা কম বা বেশি হতে পারে। যেহেতু ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত রোগ তাই এই জ্বরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর ওপরে হতে পারে। শুধু যে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে থাকবে এমনটা কিন্তু নয় শিশুদের ক্ষেত্রে এর নিচেও নামতে পারে।

ক্ষুধামন্দা দেখা যায়
বাচ্চার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্ষুধা মন্দা দেখা দিতে পারে। দেখবেন বাচ্চা কিছুই খেতে চাচ্ছে না। মানে খাওয়াতে পুরাই অরুচি দেখা দিবে।

প্রসাবে ব্যাঘাত
আপনার বাচ্চা যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তার স্বাভাবিক প্রসাবে ব্যাঘাত ঘটবে। ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চা যদি প্রসাব না করে তাহলে ধরে নেওয়া যায় বাচ্চাটি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত।

শরীর ব্যথা করা
বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের আরেকটি প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মাথাব্যথা, পেট ব্যথা কিংবা শরীর ব্যথা করা। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যথা কম বেশি হতে পারে।

বমি ও বমিভাব
প্রথমত ডেঙ্গু জ্বর হলে বাচ্চার খাওয়াতে অনেক অরুচি দেখা দেয়। যদিও বাচ্চা কিছু খেয়ে থাকে তাহলে দ্রুত বমি করে সেগুলো তুলে ফেলে।


পানিশূন্যতায় ভোগা
বাচ্চাদের যদি ডেঙ্গু জ্বর হয় তাহলে পাতলা পায়খানা অথবা ডায়রিয়া হতে পারে। এমন অবস্থায় বাচ্চা পানি শূন্যতায় ভুগতে পারে।

শরীরে রেশ দেখা
এডিস মশার কামড়ের ফলে যদি ডেঙ্গু জ্বর হয় তাহলে আপনার বাচ্চার শরীরে নানা রকম লালচে রঙের রেশ দেখা দিতে পারে।

রক্তক্ষরণ ঘটা
ডেঙ্গু জ্বরের পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি হয়ে গেলে শিশুর রক্তবমি অথবা পায়খানার সাথে রক্ত বের হতে পারে।

একজন বাচ্চার ক্ষেত্রে সাধারণত উপরোক্ত লক্ষণগুলো ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। তাই উপরের লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চাকে ওষুধ সেবন করান এবং ঘরোয়া উপায়ে যত্ন নিন।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে 

ডেঙ্গু জ্বর থেকে দ্রুত মুক্তির জন্য আপনাকে অবশ্যই খাদ্য তালিকার পরিবর্তন আনতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরের সময় কিছু কিছু খাদ্য গ্রহণ করা উচিত এবং কিছু কিছু খাদ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। যে সকল খাদ্য গ্রহণ করা উচিত সেগুলোর তালিকা হলঃ

পর্যাপ্ত পানি এবং তরল খাবার
ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানি শূন্যতা থেকে বাঁচতে এই সময় প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করুন।

সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আয়রন, মিনারেলস এবং ফাইবার থাকে যা আমাদের শরীরে পুষ্টির যোগান দেয় এবং শরীরে শক্তি আনে।


তরল খাবার
ডেঙ্গু জ্বর হলে তরল খাবার খাওয়া উচিত। সারা দিনে প্রায় তিন লিটারের অধিক তরল খাবার খাওয়া উচিত। তরল খাবারগুলো হতে পারে তাজা ফলের রস, ডাবের পানি, সবজি সুপ্য ইত্যাদি।

প্রোটিনযুক্ত খাবার
দ্রুত রোগ থেকে মুক্তি পেতে এবং শরীরের দুর্বলতা কে কাটিয়ে তুলতে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত যেমন মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, মসুরের ডাল, মুরগির মাংস ইত্যাদি।

উপরিক্ত খাবারগুলো নিয়মিত খেলে একজন ডেঙ্গু রোগী খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে এবং বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ঔষধ খেতে হবে 

ডেঙ্গু জ্বর যেহেতু সাধারণ জ্বরের মতোই তাই ডেঙ্গু জ্বর কমাতে সাধারণত প্যারাসিটামল দেয়া হয়ে থাকে। প্যারাসিটামল দেওয়ার পাশাপাশি রোগীর শিরায় স্যালাইন দেওয়া হয় যেন রোগী খুব দ্রুত শক্তি পায় এবং সুস্থ হয়ে যায়। তবে রোগীকে কোন ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত নয় এবং তার পাশাপাশি নন স্টেরএডাল অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ঔষধ দেওয়া উচিত নয়। 


জ্বরের পরিমাণ যদি খুবই বেশি পাই তাহলে রোগীকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিতে হবে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর হলে খুবই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। পূর্ববর্তী আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে সে বিষয়ে।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে 

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিস মশার এক ধরনের বিশেষ ভাইরাস পরিবহন করে। উক্ত ভাইরাসের আক্রমণের ফলে আমাদের শরীরে ডেঙ্গু জ্বর হয়। তাই এডিস মশার কামড়ানোর ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার পরে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করলে ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর থেকে আরোগ্য মিলে। ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে সেই সম্পর্কে আমরা উপর থেকে জেনেছি।

লেখকের মন্তব্য

আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা জানলাম ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে এবং বাচ্চাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে আমরা জানবো। আমরা আরো জেনেছি ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে এবং ডেঙ্গু জ্বর হলে কি ওষুধ খেতে হবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।

সর্বপরি পোস্টটি যদি আপনাকে ভালো লাগে তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। যে কোন প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে দ্রুত কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। যেসকল বন্ধুরা ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত তাদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাদের ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে জানতে এবং সচেতন হতে সাহায্য করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url