ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ - ডিম্বাণু ছোট হয় কেন বিস্তারিত জেনে নিন
ডিম্বাণু ( Ovum) হলো নারীর প্রজনন কোষ যা ডিম্বাশয়ে তৈরি হয়। ডিম্বাণু দেখতে বিয়ে হতে এবং গোলাকার হয় যা নারীর দেহে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মুক্ত হয়। ডিম্বাণুমুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সাধারণত ওভূলেশন বলে। আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানবো ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ এবং ডিম্বাণু ছোট হয় কেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা আরো জানবো ডিম্বাণু বৃদ্ধির ঔষধ, মেয়েদের ডিম্বাণু কত দিন জীবিত থাকে এবং মেয়েদের ডিম্বাণু বড় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
তাহলে ডিম্বাণু ছোট-বড় হওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ পোস্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ
ডিম্বাণু বের না হওয়া বা ওভুলেশন না হওয়ার লক্ষণগুলো বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। আজকের পোষ্টের আলোচনার প্রধান বিষয় হচ্ছে ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ এবং ডিম্বাণু ছোট হয় কেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। তাহলে চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক ডিম্বাণু বের না হওয়ার উল্লেখযোগ্য লক্ষণ গুলোঃ
অনিয়মিত মাসিক
ডিম্বাণু বের না হওয়ার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে অনিয়মিত মাসিক চক্র। মাসিক চক্র অনিমিত হওয়া বা মাসিকের সময়সূচিতে বড় ধরনের ব্যবধান ঘাটলে ওভুলেশন না হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এতে করে মেয়েদের ডিমানো বের না হতেও পারে।
প্রসবজনিত সমস্যা
ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণের মধ্যে আরেকটি প্রধান লক্ষণ হচ্ছে প্রসাব জনিত সমস্যা। যারা সন্তান ধারণ করতে চাচ্ছেন কিন্তু নানা রকম অসুবিধা সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ওভুলেশন সমস্যা থাকতে পারে।
অস্বাভাবিক যোনিস্রাব
ডিম্বাণু না ফোটার আরেকটি প্রধান কারণ হলো অস্বাভাবিক যোনিস্রাব। এই সময় যোনি দিয়ে সার্বক্ষণিক সাদা ও পাতলা এক ধরনের স্রাব বের হতে পারে।
মাসিকের সময় ব্যথা
যেসব নারীর ওভুলেশন নিয়মিত হয় তাদের মাসিকের সময় পেটের নিচে দিকে হালকা করে ব্যথা বা অসুস্থ হতে পারে। যদি এধরনের লক্ষণ না থাকে তবে এগুলো ওভুলেশনের অভাব নির্দেশ করে।
অনিয়মিত রক্তস্রাব
ডিম্বাণু বের না হলে মাসিকের সময় রক্তস্রাবের পরিমাপ অনিয়মিত অর্থাৎ কমবেশি হতে পারে।
মেজাজ খিটখিটে
ডিম্বাণু বের না হওয়ার আরেকটি প্রধান লক্ষণ হচ্ছে মেজাজ খিটখিটে হওয়া। হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্যহিতাহীনতার কারণে মেজাজের পরিবর্তন, উদ্দীগ্ন এবং বিষন্নতা দেখা দিতে পারে।
শরীর ব্যথা
ওভুলেশনের সময় মেয়েদের তলপেটে, নিতম্বে বা পিঠের দিকে হালকা ব্যথা অনুভব হতে পারে।
হরমোনাল সমস্যা
এই সময় এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টোরেন হরমোনের ভারসাম্য সমস্যা দেখা দিতে পারে যার ফলে মুখে ব্রণ এবং শরীরের চুলের বৃদ্ধি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাপমাত্রার পরিবর্তন
মাসিক চক্রের তাপমাত্রা সাধারণত অভুলেশনের পরে সামান্য বৃদ্ধি পায়। যদি তাপমাত্রায় কোন পরিবর্তন না হয় তবে এটি ওভুলেশনের অভাবের ইঙ্গিত হতে পারে।
জ্বরায়ু মুখের পরিবর্তন
জরায়ুর মুখের যদি কোন পরিবর্তন না ঘটে তাহলে বুঝবেন ওভুলেশন অর্থাৎ ডিম্বাণু বের হয়নি। কেননা এই সময় জ্বরায়ুর মুখ নরম ও ভিজে ভিজে হয়ে থাকে। আবার সামান্য উপরের দিকে উঠে যাই।
উপরিক্ত তথ্যগুলো সাধারণত ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। তবে ব্যক্তি ভেবে উক্ত লক্ষণ গুলো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে এবং অন্যান্য আরো লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। তাই ডিম্বাণু বের না হলে অর্থাৎ ovulation না হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রার পরিবর্তন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন করুন।
ডিম্বাণু বৃদ্ধির ঔষধ
ডিম্বাণু বৃদ্ধির জন্য বা ওভুলেশন উদ্দীপিত করতে কিছু কিছু ঔষধ ব্যবহৃত হয় যেগুলো সাধারণত বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় ডাক্তারগণ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। এই ওষুধগুলো সাধারণত ডিম্বাণু বৃদ্ধি এবং পরিপক্কতায় সাহায্য করে যাতে নিয়মিত ওভুলেশন হয়। উপরের তথ্য থেকে আমরা জেনেছি ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত। ডিম্বাণু বৃদ্ধির কিছু ঔষধ হলোঃ
ক্লোমিফেন সাইট্রেট
এটি খুবই জনপ্রিয় একটি ঔষধ যা ডিম্বাণু বৃদ্ধি এবং ওভুলেশন উদ্দীপিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এটি মস্তিষ্কের কিছু হরমোন উদ্দিপ্তিত করে যা ডিম্বাণু মুক্তির জন্য অতীব জরুরী।
গোনাড্রোট্রপিন
এটা এক ধরনের ইনজেকশন যা সরাসরি ডিম্বাশয়ে প্রভাব ফেলে এবং ডিম্বাণু তৈরির প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে।
লেট্রোজল
এটি এস্টোজেন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং ডিম্বাশয়ের হরমোনের কার্যকর্তা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে ডিম্বাণুর বৃদ্ধি এবং মুক্ত হয়ে যায়।
FSH ইনজেকশন
উক্ত ইনজেকশনটি সরাসরি ডিম্বাশয়ে প্রভাব ফেলে যার ফলে ডিম্বাণুর বৃদ্ধি ও পরিপক্কতা অর্জন করে। যেসব নারীরা ওভুলেশনজনিত সমস্যায় ভোগে তাদের ক্ষেত্রে এই ইনজেকশনটি দেয়া হয়।
ডিম্বাণু বৃদ্ধির উপরিক্ত ওষুধগুলো শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ এবং পর্যবেক্ষণে গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত বা ভুল ভাবে ব্যবহার করলে ডিম্বাশয়ে অতিরিক্ত প্রভাব পড়তে পারে এবং বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এই ওষুধগুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহন করতে হবে।
ডিম্বাণু ছোট হয় কেন
আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা যেতে পারবো মেয়েদের ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ এবং ডিম্বাণু ছোট হয় কেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা ইতিমধ্যে এটি ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ জেনে গেছি। এখন আমরা জানবো ডিম্বাণু মা ছোট হয় কেন সেই সম্পর্কে। ডিম্বাণু ছোট হওয়ার কয়েকটি কারণ হতে পারে যা নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। যেমনঃ
- শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
- অতিরিক্ত বয়স বৃদ্ধি
- শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব
- অন্যান্য শারীরিক বিভিন্ন রোগ
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ
- জেনেটিক কারণে
- অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি
উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য সাধারণত ডিম্বাণু ছোট হয়। ডিম্বাণুর আকার ছোট হওয়ার কারণে সন্তান ধারনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই ডিম্বাণুর আকার ছোট হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
মেয়েদের ডিম্বাণু বড় করার উপায়
ডিম্বাণুর আকার বড় করার জন্য কিছু বিশেষ পন্থা অবলম্বন করতে হবে এবং জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি পরিবর্তন আনতে হবে। যদিও ডিমানোর আকার জেনেটিক এবং হরমোনাল অবস্থার ওপর নির্ভর করে। তারপরও মেয়েদের ডিম্বাণু বড় করার কিছু বিশেষ উপায় হলঃ
হরমোন থেরাপি
যেহেতু হরমোনের কারণে মেয়েদের ডিম্বাণুর আকার ছোট বড় হয়। তাই ডিম্বাণু বৃদ্ধির জন্য কিছু হরমোন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করার অর্থাৎ হরমোন থেরাপি নেওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন যেমন ফল, সবজি, প্রোটিন, পুণ্য শস্য এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি। বিশেষ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার যেমন বেরি, বাদাম এবং সবুজ শাকসবজি গ্রহণ করুন। এগুলো ডিম্বাণু আকার বড় করতে এবং ডিম্বাণু সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
চাপ কমানো
মানসিক চাপের কারণে ডিম্বাণুতে প্রভাব পড়তে পারে তাই ডিম্বাণু আকার বৃদ্ধি করার জন্য মানসিক চাপ কমানো এবং যোগব্যায়াম, মেডিটেশন করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
শরীরের অতিরিক্ত ওজন ডিম্বাণুর আকার ও গুণগত মানকে প্রভাবিত করতে পারে। নির্দিষ্ট ভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখুন।
ভিটামিন ও মিনারেল
ভিটামিন জাতীয় খাবার ডিম্বাণুর স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে। তাই ডিম্বাণুর আকার বৃদ্ধি করতে অবশ্যই ভিটামিন জাতীয় খাবার খান।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম করলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে।
উপরের কাজগুলো নিয়মিত করলে ডিম্বাণুর আকার বৃদ্ধি করা সম্ভব। আজকের পোস্ট থেকে আমরা জানলাম ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ এবং ডিম্বাণু ছোট হয় কেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।
ডিম্বাণু বের হওয়ার লক্ষণ
উপরিক্ত তথ্য থেকে আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ এবং ডিম্বাণু ছোট হয় কেন সেই সম্পর্কে। এখন আমরা ডিম্বানো বের হওয়ার কিছু বিশেষ লক্ষণ জানবো।
- মাসিক চক্রের পরিবর্তন
- শারীরিক ব্যথা অনুভব করা
- গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুতির লক্ষণ
- সার্ভিকাল মোকাসের পরিবর্তন
- যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি
- কিছু বিশেষ শারীরিক পরিবর্তন
- সেনসিটিভিটি বৃদ্ধি
উপরোক্ত লক্ষণগুলো সাধারণত ডিম্বাণু বের হওয়ার লক্ষণ হিসেবে পরিচিত। ব্যক্তি ও স্থানভেদে লক্ষণগুলো পরিবর্তন বা আলাদা হতে পারে।
মেয়েদের ডিম্বাণু কতদিন জীবিত থাকে
মেয়েদের ডিম্বাণু সাধারণত মুক্তি পাওয়ার প্রায় ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা জীবিত থাকে। যদি ডিম্বাণুটি মুক্তির পর শুক্রানুর সঙ্গে মিলিত হয় তাহলে এটি নিষিক্ত হয়ে ভ্রুণের রূপ ধারণ করতে পারে। আর যদি এই সময়ের মধ্যে উক্ত ডিম্বাণু নিষিক্ত না হয় তাহলে এটি মায়ের দেহে জীবিত থাকতে পারবে না এবং শেষে গর্ভাশয়ের মাধ্যমে মাসিকের মধ্য দিয়ে বের হয়ে যাবে। অন্যদিকে একটি শুক্রাণু ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। আজকের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ এবং ডিম্বাণু ছোট হয় কেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
লেখকের শেষকথা
উপরিক্ত আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি ডিম্বাণু বের না হওয়ার লক্ষণ এবং ডিম্বাণু ছোট হয় কেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত। আমরা আরো জেনেছি ডিম্বাণু বৃদ্ধির ঔষধ, মেয়েদের ডিম্বাণু কত দিন জীবিত থাকে এবং মেয়েদের ডিম্বাণু বড় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
সর্বোপরি পোস্টটি ভালো লাগলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। যে সকল মেয়েরা ডিম্বাণু বৃদ্ধি জনিত এবং ডিম্বাণু সম্পর্কে জানতে চাই তাদের মাঝে পোস্টটি শেয়ার করে তাকে জানার সুযোগ করে দিন।
রাজশাহীি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url